ফাইজুর রহমান শুভ
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এক ডজন প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই বরাদ্দ ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। কৃষকের প্রশিক্ষণের নাস্তা, খাবার ও ভাতাদি ঠিকমতো না দিয়ে তিনি বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ মনগড়াভাবে পরিচালনা করারও অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে। গত ২২ এপ্রিল আউশ প্রণোদনা কার্যক্রম না করে ১ মাস পর ২৩ মে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করেন। নির্দিষ্ট সময় সার ও বীজ বিতরণ না করায় সরকারের এই প্রকল্প কৃষকের উপকারে আসেনি। মৌসুম পেরিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম পরিচালনা করায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক ডজন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে। তাতে বিভিন্ন প্রকল্প ধরে আত্মসাতের অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টিবাগান স্থাপন প্রকল্প থেকে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৫০ টাকা, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ১১২ টাকা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প থেকে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর কৃষক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, রাজস্ব প্রকল্প থেকে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারগ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেডিয়েশন ইন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৮ টাকা, স্টেকহোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেস প্রকল্প (এসএসিপি) থেকে ২৯ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করেন অনিরুদ্ধ দাস।
এ ছাড়া ওই কৃষি কর্মকর্তা তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এই ১২ প্রকল্পে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোট ২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করেন অনিরুদ্ধ দাস।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পগুলোর কোনো দৃশ্যমান কাজ বাউফল উপজেলায় নেই। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজ না করার অভিযোগসংবলিত প্রতিবেদন দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। অনিরুদ্ধ দাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অবহিত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন অনিরুদ্ধ দাস। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ওই কর্মকর্তারা সেটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
তবে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। তার দাবি, প্রকল্পের কাজ যথানিয়মে করা হয়েছে। সব কাজই দৃশ্যমান। এ ব্যাপারে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।