মোহাম্মদ শিহাব
স্ত্রী-সন্তান ফেলে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিয়ে করে পালিয়ে গেছেন ইউনুস সরদার (৩১)। ফলে বিপদে পড়েছে পরিবারটি। বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী রাবেয়া আক্তারের জীবন কাটছে মানবেতর। সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনা এবং স্বামীর নেওয়া ঋণের কারণে রাবেয়া এখন কোনো কুল খুঁজে পাচ্ছেন না।
পরিবারটি বসবাস পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের বাসিন্দা। ইউনুস সরদার,, চর-চাপলী এলাকার নজরুল ইসলাম সরদারের ছেলে। ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে রাবেয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ইউনুসের। তাদের ঘরে ৯ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি মেয়ে ও তিন মাসের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, ইউনুস এবং ওই ছাত্রীর পরিবার একই এলাকায় থাকে। এই সুবাদে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইউনুসের। টিকটকে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সবশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ওই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যান ইউনুস।
পরবর্তীতে উভয় পরিবার জানতে পারে যে, তারা বিয়ে করেছেন। কিন্তু কোথায় আছেন সেই হদিস মেলেনি এখনো। ওই শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ইউনুস সম্পর্কে তার খালু।
এদিকে ইউনুসের এমন কাণ্ডে দুর্বিষহ জীবন হয়ে উঠেছে রাবেয়ার। কারণ তার স্বামী পেশায় জেলে। তাই একদিন রোজগার বন্ধ থাকলে না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। এখন স্বামী চলে যাওয়ায় দুই সন্তান নিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন রাবেয়া।
রাবেয়া বলেন, আমার এক মেয়ের বয়স তিন মাস মাত্র। আরেকজন প্রতিবন্ধী। এরমধ্যে আবার এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেওয়া। এনজিওর লোকেরা প্রতিদিন আসে টাকার জন্য। অথচ আমার সন্তানদের খাবারের জন্য ঘরে পানি ছাড়া কিছুই নেই। আমার ছোট ভাই দিনমজুরির কাজ করে। গত এক মাস যাবত তার টাকায় কোনোমতে খেয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতে হয়। কখনো আশপাশের লোকজন কিছু খাবার দেয়।
এসময় রাবেয়া সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা একটু আমার স্বামীকে খুঁজে বের করে দিন, আমার পরিবারটাকে বাঁচান। না হয় আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সবুজ বলেন, এই পরিবারের একমাত্র আয়ের ব্যক্তি ছিল ইউনুস। তিনি এইভাবে পালিয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পরেছে তারা। একেবারে খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। আমাদের অনুরোধ দেশের যে প্রান্তে ইউনুসকে দেখবেন ধরিয়ে দেবেন।
পালিয়ে যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার মেয়ে দাদাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে খোঁজ করে জানতে পারি সে আমার বোনের স্বামীর সঙ্গে পালিয়েছে। এরপর আমরা থানায় জানাই। পুলিশ এসে উভয় পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে।
মহিপুর থানার এএসআই সাধন কুমার পাল বলেন, আমাদের কাছে মৌখিকভাবে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তারা মামলা কিংবা অভিযোগ করতে রাজি নয়, নিজেরাই খোঁজাখুঁজি কছে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, বিষয়টি অবগত নই, জানার চেষ্টা করছি। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।