নিজস্ব প্রতিনিধি: মোহাম্মদ শিহাব
দেশে না থেকেও মামলার আসামি হয়েছেন শরীয়তপুরের এক যুবদল নেতা। মামলার এজাহারে উল্লেখিত সময়ে তিনি ওমরাহ করার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন।
যুবদল নেতার পাসপোর্টে দেখা যায়, তিনি ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে যান। পরে ৯ মার্চ তিনি ওমরাহ শেষ করে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন ওই যুবদল নেতা ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে বসে তিনিসহ তার আরও ৩ জন সহযোগী তার ছেলের থেকে টাকা নিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় মাদারীপুর রাজৈরের মো. ইলিয়াছ আকন বাদী হয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরসহ বিভিন্ন জেলার ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৮ থেকে ৯ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মানব পাচার মামলা দায়ের করেন।
তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তবে এই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সিটিটিসি কাউন্টার টেরোরিজম মোহাম্মদপুর থানার একটি মানব পাচার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে একদিন পরে কোর্টে তোলা হয়। কিন্তু ঘটনার সময় ওমরাহ হজে থাকায় কোর্ট পাসপোর্ট দেখে জামিন দেন। তবে উক্ত থানার একটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইন ও অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের অভিযোগের পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুদিনের রিমান্ডে নেন। দুদিনের রিমান্ড শেষে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ৮ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি এসিএমএম কোর্ট থেকে জামিন পান।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী ইলিয়াছ আকনের মেঝ ছেলে ইসমাইলের সঙ্গে মামলার ১নং আসামি হাজী আহমদ আলীর সঙ্গে পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে তার ভাইয়ের মাধ্যমে ইতালি নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে তারা রাজি হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য ১৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১২ ডিসম্বর ৮ লাখ টাকা সে সময় দেওয়া হয়। পরে তার ছেলেকে বলেন, ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তার ইতালি যাওয়ার ফ্লাইট।
সেই অনুযায়ী ৩ হাজার ইউরো নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের ঢাকার পল্টনে সাগর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ইস্টার্ন অফিসে যেতে বলা হয়। তাদের কথা অনুযায়ী সেই অফিসে তার ছেলে গেলে যুবদল নেতা সাগর ও তার ৩ সহযোগী মো. আউয়াল, রাসেল খান ও রাশেদ কৌশলে এক হাজার পাঁচশ ইউরো নিয়ে নেয়। পরে ১৬ ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও তারা ইতালি যাওয়ার কোনো অগ্রগতি না করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ইলিয়াছ আকন কালবেলাকে বলেন, আমি মতিউর রহমান সাগরকে কখনো দেখিনি ও চিনিও না। আমার বাড়ি রাজৈর, তার বাড়ি শরীয়তপুরে। তাকে কীভাবে চিনব। তার সঙ্গে আমার লেনদেন হলে না হয় চিনতাম। আমার ছেলে ইসমাইল লিবিয়া থাকে। সে কাকে কখন কীভাবে টাকা দিয়েছে আমি তা জানি না। আমার ছেলের সঙ্গে লিবিয়া থাকে শরীয়তপুরের নুরু। তাদের কাছ থেকেই আমি সাগরের নাম শুনেছি। এ জন্য তার নাম মামলায় দিয়েছি। তবে সাগর যদি নির্দোষ হয় তাহলে আমি তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। আমি চাই না আমার জন্য কোনো নিরপরাধ মানুষ ভোগান্তির শিকার হোক।
যুবদল নেতা সাগর কালবেলাকে বলেন, এমন অনেক মামলা আমার জীবনে আছে। ঘটনার সময় আমি বিদেশ ছিলাম, তবুও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় আমাকে জড়িয়েছে। এই মামলা গত ২ বছর আগের। ঘটনার দিন আমি সৌদিআরব পবিত্র হজে ছিলাম। তবুও এজাহারভুক্ত আসামি আমি। সিটিটিসি কোনো সঠিক তদন্ত না করেই আমাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে।
কাউন্টার টেররিজমের তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, বাদী মামলাটি প্রথম মোহাম্মদপুর থানায় করেন। পরে মামলাটি কাউন্টার টেররিজমে আসলে আমি তদন্তের দায়িত্ব পাই। যুবদল নেতা সাগর ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এরকম কোনো প্রমাণ দেখালে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।