জনস্বার্থে সাংবাদিকতা করা লোক গুলো নীতি-আদর্শহীন তথাকথিত সাম্বাদিকদের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রায়। এখন সাংবাদিক বললেই, সাধারণ মানুষের চোখে ভেসে উঠে স্মার্ট ফোন ও বুম হাতে দৌড়ানো মানুষটির চিত্র।
যে মানুষটি ক'দিন আগে মুদির দোকান করেছিল, আইসক্রিম বিক্রি করছিল, জমির দালালি করছিল, প্রবাস থেকে ফিরেছিল, বেকার ও ভবেঘুরে ছিল, এক কথায় যার সাংবাদিকতা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান ছিল না, সে আজ ফেসবুক চ্যানেলের সম্পাদক। তার পিছু ছুঁটছে তারই মত একঝাঁক সাম্বাদিক। একবার একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ নেয়া কতটা জরুরী? তিনি হেসেই উত্তর দিলেন, মাল্টিমিডিয়ার যুগে প্রশিক্ষণ লাগে নাকি! ভিডিও করতে পারলেই হলো। আর মুখে বললে গুগুল সব লিখে দেয়। আহা, গণতান্ত্রিক দেশে চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকতা, এটিকে কোথায় নামানো হলো!
এটির উত্তর সিম্পলি দেয়া যায়: ডাক্তার কিংবা উকিল হওয়ার পর দীর্ঘ একটি সময় সিনিয়রদের হাতে ইন্টার্নি করতে হয়। এতে হাতেকলমে পেশা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা যায়। ঠিক তেমনি সাংবাদিকতা করতে হলে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নাই। সাথে দক্ষ ও বিচক্ষণ সাংবাদিকদের কাছে ইন্টার্নি করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে হাতে কলমে শিখতে হবে।
একজন সাংবাদিক কখনো বেকার বসে থাকতে পারে না। তাকে সবসময় পড়তে হয়! ভাবতে হয়! দৌড়াতে হয়! মানুষের সাইকোলজি বুঝে তাদের সাথে তাদের মত মিশতে হয়! খবরের গোড়ায় পৌঁছাতে হয়! সকল শ্রেণীর মানুষ উপযোগী লিখতে হয়! সংবাদ তৈরী করতে হয়! উপস্থাপন করতে হয়! আর প্রত্যেক সংবাদে জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হয়! সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নীতি আদর্শকে ধরে রাখতে হয়।
অনেকেই বলেন—আমি সাংবাদিকতা নিয়ে কটুক্তি করি, আসলে বিষয়টি তা নয়! আমি সাংবাদিকতাকে হৃদয়ে ধারণ করি। তবে যে মানুষ গুলো কোনটা সংবাদ আর কোনটা সংবাদ নয়, তা আলাদা করতে পারে না, সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে—তাদের সমালোচনা আমি করি সবসময়। আরেকটি কথা ফেসবুকে চ্যানেল খুলে কিছু লিখলে বা ভিডিও বানানো দোষ না। বিশ্বে এখন স্বাধীন সাংবাদিকতা ও নাগরিক সাংবাদিকতা বহুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। জনস্বার্থে রিপোর্ট করলে তা নিসন্দেহে উপকারী। তবে নেতা, জনপ্রতিনিধি, আমলাসহ প্রভাবশালীদের তেল দেয়া সংবাদ করলে বিতর্কিত হবে স্বাভাবিক।
সুতরাং পাঠক হিসেবে আপনাকেই বেছে নিতে হবে কে সাংবাদিকতা করছে আর কে সাম্বাদিকতা ছড়াচ্ছে!
লেখক:
মোঃ রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।